আন্ডারগ্র্যাড লাইফের শেষে যখন থেকে মানুষজন জানতে শুরু করে যে আমার সাথে গবেষণা জিনিসটার অল্পবিস্তর এক্সপোজার আছে, আমার কাছে অনেকেই জিজ্ঞেস করে প্রায়শই যে রিসার্চ জিনিসটা কবে/কোনসময় থেকে শুরু করা উচিত অথবা রিসার্চ করতে চায় তারা; হোক কারোর সাথে/একা নিজে থেকে।
আমি নিজে গবেষণা জিনিসটা আন্ডারগ্র্যাডে শুরু করি ৬ষ্ঠ সেমিস্টার থেকে, মানে সেকেন্ড ইয়ারের একদম শেষের দিক থেকে। চেয়েছিলাম আরও আগে থেকেই শুরু করতে, কিন্তু ওভাবে সুপারভাইজর না পাওয়ায় হয়ে উঠে নাই।
অনেক অভিজ্ঞ মানুষই মনে করেন থার্ড/ফোর্থ ইয়ারে শুরু করা উচিত রিসার্চ কিন্তু আমি এটাই ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে, একটা মানুষ যদি রিসার্চ শুরু করতে চায়, বেসিক নলেজ থাকলে এটা শুরু করা উচিত যত দ্রুত সম্ভব। বেসিক বলতে কোন মেজরে কতটুকু বুঝায় জানি না, কিন্তু কম্পিউটার সাইন্স মেজরে সেটা আমি মনে করি ডাটা স্ট্রাকচার, এবং এলগোরিদম পর্যন্ত। কারণ এইগুলো তে ভালো জ্ঞান থাকলে এখান থেকে একটা মানুষ তার দরকারমত শিখে নিতে পারবে; নাইলে পরে ফাউন্ডেশন ভালো না এমন বাড়ির মত ধ্বসে পড়া ছাড়া গতি থাকে না। এইটা রপ্ত করতে যদি ৯ সেমিস্টারও (মানে ৩ বছর) লেগে যায়, তাও ভালো, এবং তারপরেই শুরু করা উচিত।
কিন্তু রিসার্চ করার আগে অবশ্যই কিছু সেলফ-স্টাডি করে নিতে হবে। কোন বিষয়ে কাজ করতে আগ্রহী, তা নিয়ে। এটা করার জন্য অবশ্যই গুগল এবং ইউটিউব আছে শুরুতে। ঘাটাঘাটি করে চেষ্টা করা যেতে পারে টিউটোরিয়াল-ভিত্তিক কোর্স/প্রোজেক্ট করার (বই পড়তে পারলে সবচেয়ে ভালো)। তারপর একটা ধারনা আসবে যে জিনিসগুলোত্ব আটকে গেলেও সলভ করতে মজা লাগতেসে কিনা, “এটার আমি শেষ দেখে ছাড়বো” মেন্টালিটি কাজ করলে তবেই সেই টপিক নিয়ে কাজ করা যেতে পারে।
এখন আরেকটা প্রশ্ন আসবে। গবেষণাটা কার সাথে করবে? শুরুতে কখনোই বলবো না একা করতে, শুরু করতে হবে কারোর হাত ধরে। এটা হইতে পারে যেকোন রিসার্চারের সাথে যে এক্টিভলি গবেষণা করতেসে বর্তমানে। এখন এটা হইতে পারে কোন ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি, হইতে পারে কোন ডক্টরাল/পোস্ট-ডক্টরাল রিসার্চার (এমনকি আমার সুপারভাইজর ও তখন পিএইচডি স্টুডেন্ট ছিলেন, ফ্যাকাল্টি হবার পাশাপাশি)। তবে একদম খালি হাতে গিয়ে বললে হবে না “রিসার্চ করতে চাই”, উপরের সেলফ-স্টাডিটা দরকার সত্যিকারের ইন্টারেস্ট দেখানোর জন্য। উনারা একটা ভালো ধারনা তৈরি করিয়ে একটা রাস্তা দেখায়া দিতে পারেন কিভাবে গবেষণা শুরু করা যাইতে পারে। হতে পারে তাদেরই কোন একটা রিসার্চ প্রোজেক্টের ছোট কিন্তু উল্লেখযোগ্য পার্টে আপনাকে নিয়ে পারে উনার আরএ হিসেবে। হইতে পারে উনি আপনাকে এটার জন্যে কোন পারিশ্রমিক দিবেন না (হ্যাঁ এটা ভালো না লাগতে পারে শুনতে), কিন্তু যে অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান আপনি পাবেন অল্প সময়ে নিজে একা করার থেকে, এটা কল্পনাতীত।
কারণ একজন রিসার্চ সুপারভাইজর থেকে যা পাওয়া সম্ভবঃ
১। রিসার্চ কিভাবে করতে হয়, সেটার জ্ঞান/টেকনিক এবং সর্বোপরি গাইডেন্স।
২। রিলেটেড ফিল্ডে সাপোর্ট এবং রিসোর্স, যেগুলো নর্মাল গুগল সার্চে না পাওয়া যেতে পারে।
৩। একাডেমিক রাইটাপ কিভাবে করতে হয়, ব্যাপারটা শিখতে পারা।
৪। তাদের রিসার্চ প্রোজেক্ট আপনার সিভিতে এড করতে পারবেন (অবশ্যই মেনশন করতে হবে আপনার কন্ট্রিবিউশন কতটুকু ছিল)।
৫। তাদের রিসার্চ প্রোজেক্ট থেকে পেপার পাবলিশ হলে আপনার নাম কো-অথর হিসেবে যাবে, যদি আপনি কাজ ঠিকমতো ডেলিভার করতে পারেন এবং উনি এথিক্যাল থেকে আপনার ক্রেডিট দিতে চান। পেপার পাবলিশ হলে সেটা সিভিতে এড করার ব্যাপার তো আছেই।
৬। স্ট্রং রেকোমেন্ডেশন লেটার এবং রেফারেন্স লিস্টে তাকে রাখতে পারা। মানুষ নাকি (স্ট্রং পরের কথা) রেকোমেন্ডেশন লেটার নেয়ার কাউকে পায় না চাকরি/হাইয়ার স্টাডিজের সময়, যা এখান থেকে সহজেই পাওয়া সম্ভব।
৭। পার্মানেন্ট রিসার্চ কোলাবোরেটর। রিসার্চ করার সময় রিলেভেন্ট টপিক হলে উনাকে পাওয়া যেতে পারে মেন্টর হিসেবে।
৭.১। রিসার্চ কোলাবোরেট করতে গিয়ে দেখা যেতে পারে পেপার এক্সেপ্ট হইলে অনেক খরচ লাগতেসে রেজিস্ট্রেশন করতে। সেখানে হইতে পারে উনিই পুরোটা/একটি বড় অংশ দিয়ে দিচ্ছেন উনার পকেট/ফান্ড থেকে।
৮। নিজে ইন্ডিপেন্ডেন্টভাবে রিসার্চ করতে পারার জ্ঞান।
দিনশেষে নিজের নতুনকিছু জানার ক্ষুধাটাই সবার আগে মূল্য পাবে সবকিছুর আগে। নিজ আগ্রহ এবং জানার চেষ্টা না থাকলে কোন লাভ হবে না। এবং এর পাশাপাশি ধৈর্য্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অনেকে খুব অল্প সময় একটা কাজে ইনভেস্ট চেষ্টা করে একটা পেপার পাবলিশ করার যেটা অনুচিত। একটি এক্সেপ্টেবল সিজিপিএ এর পাশে দিনশেষে ভালো একটা কনফারেন্স/জার্নালে নিজের ভালো মাত্র একটাই কাজ থাকলে সেটাই প্রোফাইলে জ্বলজ্বল করবে, হাজারটা পাবলিকেশন যদু-মদু কনফাররেন্স/জার্নালে থাকার পরিবর্তে।
আশা করি ব্যাপারটা সাহায্য করবে নতুনদের কিংবা আগ্রহীদের জন্য। শুভ কামনা সবাইকে।
Joyanta J. Mondal
Graduate Research Fellow
Department of Computer Science
University of Alabama at Birmingham (UAB)