পিএইচডি অ্যাডভাইজর ভাল না হলে কী করবেন?

সোশাল মিডিয়াতে উচ্চশিক্ষা নিয়ে কাজ করা নানা ফেইসবুক গ্রুপে আমি শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করে থাকি। সম্প্রতি অনেক পোস্ট দেখেছি, যেখানে পিএইচডি শিক্ষার্থীরা তাঁদের অ্যাডভাইজরের সাথে বনিবনা না হওয়া এবং তার ফলাফল নিয়ে লিখেছেন। এই ব্যাপারে আমার আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা বইতে বিস্তারিত লিখেছি, তার সাথে কিছুটা যোগ করে আজকে এখানে পোস্ট করছি। আশা করি আমার পরামর্শ এসব শিক্ষার্থীদের কিছুটা হলেও পথ দেখাবে।

এত যাচাই বাছাই করার পরেও ধরা যাক, আপনি দুর্ভাগ্যক্রমে ভাল অ্যাডভাইজর পেলেন না। তখন কী করবেন? খেয়াল রাখবেন, অ্যাডভাইজরের সাথে যদি বনিবনা না হয়, তাহলে শুরুতেই সেই সম্পর্ক ছিন্ন করা ভাল। যত দেরি হবে তত সময় নষ্ট হবে।

মনে রাখবেন, আপনি শিক্ষার্থী হলেও আপনার অধিকার আছে অনেক। কেবল ফান্ড দিচ্ছেন বলে কিংবা নামকরা প্রফেসর বলে কেউ আপনার সেই অধিকার নষ্ট করতে পারেন না। দুঃখজনক হলেও সত্যি, একাডেমিয়াতে টক্সিক লোকজন অনেক আছে যারা এক্সেলেন্স এর নামে শিক্ষার্থীদের অমানুষিক খাটায় এবং সেটাকে স্বাভাবিক মনে করে। এসব টক্সিক ব্যবহারের মধ্যে আছে, দীর্ঘসময়, পেপার ডেডলাইন না থাকলেও সব সময়ে দিনে ৮ ঘণ্টার বেশি কেউ ল্যাবে পড়ে থাকবে, বা উইকেন্ডে ল্যাবে আসবে এমন আদেশ দেয়া, বাজে এবং ইনআপ্রোপ্রিয়েট ব্যবহার করা, অপমান করা, এসব।

পক্ষান্তরে, এটাও খেয়াল রাখতে হবে, কোনো কারণে প্রফেসর ফান্ড বন্ধ করতে পারেন কারণ ফান্ডিং যদি তার গ্রান্ট থেকে আসে তাহলে সেই ফান্ডের অধীনে কাকে কখন নিয়োগ করবেন, সেটা আসলে প্রফেসরের সিদ্ধান্তের উপরেই নির্ভর করে। কাজ আশানুরূপ না হলে প্রফেসর ফান্ড বন্ধ করতে পারেন, সেটা তার সিদ্ধান্তের আওতায় পড়ে।

যদি মনে হয় আপনার আডভাইজরের সাথে আপনার মিলছে না এবং অ্যাডভাইজর আপনার সাথে খারাপ আচরণ করছেন, তাহলে ডিপার্টমেন্টের পিএইচডি বা গ্রাজুয়েট প্রোগ্রাম ডিরেক্টরের সাথে কথা বলুন। দরকার হলে ডিপার্টমেন্ট চেয়ারকেও বলুন। এবং সাথে সাথে ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েট স্কুল এবং ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অফিসের অ্যাডভাইজরদের সাথে কথা বলুন। তারা এসব ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিতে পারবেন। এসব করে প্রফেসরকে পাল্টানো যাবে না, তবে কোনো প্রতিশোধমূলক আচরণ থেকে মুক্তি পাবেন।

এখন কথা হলো, যদি প্রফেসরের সাথে বিরোধ হয়, তাহলে কী করবেন? দুইটা উপায় আছে —

১) অ্যাডভাইজর পাল্টানো

আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি অ্যাডভাইজর পরিবর্তন করা সমস্যা না। প্রায় সর্বত্রই অ্যাডভাইজর পাল্টানো যায় যদি রিসার্চের শুরুর দিকে থাকেন। কাজেই যদি সম্ভব হয়, এবং বিকল্প আরেকজন প্রফেসর আপনাকে নিতে রাজি থাকেন, তাহলে সময় থাকতে পাল্টে ফেলুন অ্যাডভাইজর।

তবে এতে অনেক সমস্যা আছে। যেমন, আগের অ্যাডভাইজরের সাথে যদি তিক্ততার সৃষ্টি হয় কোন কারণে, তাহলে সেই প্রাক্তন অ্যাডভাইজর বাকিটা সময় রাগ ধরে রাখতে পারেন। আবার আগের অ্যাডভাইজর যদি সিনিয়র হন, তাহলে জুনিয়র প্রফেসরেরা নতুন অ্যাডভাইজর হতে রাজি নাও হতে পারেন। তবে সব সময় এমন হবে তা না। আমি অনেক শিক্ষার্থীকেই দেখেছি, শুরুতে যে প্রফেসরের অধীনে পিএইচডি শুরু করেছিল, কিছুদিন পরে তাকে পাল্টে আরেকজন প্রফেসরের অধীনে সফলভাবে পিএইচডি শেষ করেছে।

২) বিশ্ববিদ্যালয় পাল্টানো

অন্য উপায়টা হল বিশ্ববিদ্যালয়ই পাল্টে ফেলা। পিএইচডির কোর্সওয়ার্ক যা করবেন, তাতে করে মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে ফেলা যায়। প্রথম অ্যাডভাইজর যদি ভাল না হন, তাহলে অন্যান্য ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই শুরু করে দিন। ভর্তি নিশ্চিত হলে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স নিয়ে চলে যান। এতে করে ঐ প্রফেসরের সাথে ডিল করার ঝামেলা আর থাকবে না।

অ্যাডভাইজর যদি চলে যান অন্যত্র, তাহলে কী করবেন?

নানা কারণে প্রফেসরেরা চাকুরি পরিবর্তন করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যেতে পারেন। আপনার অ্যাডভাইজর যদি অন্যত্র এভাবে চলে যান, তাহলে আপনার হাতে বেশ কিছু অপশন থাকে।

১) প্রফেসরের সাথে নতুন ইউনিভার্সিটিতে চলে যাওয়া। সেখানে হয়তো আবার কিছু পরীক্ষা বা কোর্স রিকয়ারমেন্ট পূর্ণ করতে হতে পারে। সাধারণত পিএইচডির মাঝামাঝি বা শেষের দিকে থাকা শিক্ষার্থীরা এরকম করে থাকে।

২) নতুন আরেকজন প্রফেসরকে অ্যাডভাইজর হিসাবে নেয়া। এক্ষেত্রে আপনাকে আগের ইউনিভার্সিটিতেই আরেকজন প্রফেসরকে বেছে নিতে হবে। আগের প্রফেসর হয়তো পিএইচডি কমিটিতে থাকতে পারেন এবং নতুন অ্যাডভাইজর না পাওয়া পর্যন্ত ফান্ডিং এর কোন একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।

© Ragib Hasan

#আমেরিকায়উচ্চশিক্ষা