উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করছেন, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। কিন্তু কেন? প্রোগ্রাম ডিরেক্টরশিপ, অধ্যাপনা, এবং ভর্তি কমিটির সদস্য + সাবেক পিএইচডি স্টুডেন্ট এই অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু ব্যাপার জানাতে চাই। আশা করি ভাল করে পড়বেন এবং অ্যাপ্লাই করার সময়ে এই ব্যাপারগুলো খেয়ালে রাখবেন।
১) যথেষ্ট সংখ্যক ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করছেন তো?
ভর্তির ব্যাপারটা অনেকটা হিট অর মিস এর মতো। হয়তো সবকিছু ঠিক আছে, কিন্তু কোন এক রান্ডম কারণে আপনার বদলে আরেকজন সুযোগ পেয়ে গেল। সেজন্য নিজের প্রোফাইল নিয়ে সুপার কনফিডেন্ট থাকলেও দয়া করে যথেষ্ট সংখ্যক ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করুন।
“কিন্তু আমার টাকা নাই”
— আপনার আমার কারোরই বাবা দাদা জমিদার না (আশা করি)। দয়া করে আবেদন করার জন্য টাকা জমান এবং সেই টাকা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যত পারেন অ্যাপ্লাই করুন। ছাত্রাবস্থায় আমি প্রচুর প্রোগ্রামিং শেখানোর টিউশনি করে এই অ্যাপ্লিকেশন ফী দেয়ার টাকা জমিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল যত পারি অ্যাপ্লাই করবো। এই ফী-টা একটা একটা ইনভেস্টমেন্টের মতো। কাজেই কিপটামি করে বা অজুহাত না খুঁজে টাকা জমান। কোথাও ফী ওয়েইভার দিলে সেটার সুযোগ নিন।
২) সঠিক জায়গায় অ্যাপ্লাই করছেন তো?
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের একটা বিশাল অবসেশন রাংকিং নিয়ে। ইউএস নিউজের তালিকা ধরে হিসাব করে তারা অমুক ইউনির ক্রম হল ৩৪, তমুকের ৩৬। তাহলে নির্ঘাত তমুকের চাইতে অমুক ভাল!
না। এইটা পুরোপুরি ভ্রান্ত একটা ধারণা। এইভাবে ইউনিভার্সিটির তুলনা হয় না। টপ টেন এর মধ্যে থাকলে এক কথা, কিন্তু এর বাইরের টপ ১০০ বা টপ ১৫০ এর মধ্যে থাকা ইউনিভার্সিটিগুলোর তেমন ফারাক নেই। আর পাশের পরে একাডেমিয়াতে না গেলে এইসব রাংকিং কেউ দেখবে না আদৌ। নানা নামকরা কোম্পানি একসময়ে টপ টেন ছাড়া পুছি না এই ভাব নিয়ে চলতো, সেই দিন বহুকাল আগে পেরিয়ে গেছে। একারণে টপ টেন থেকে পাশ করা একজন যেমন গুগল ফেইসবুকে চাকুরি পাচ্ছে, তার সাথে সাথে অন্য অনেক পিছনের রাংকিং এর ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করারাও চাকুরি পাচ্ছে একই পজিশনে। কাজ পারলে ইন্ডাস্ট্রির কেউ আর ইউনিভার্সিটির নাম দেখবে না।
৩) আপনার স্টেটমেন্ট বা রেকমেন্ডেশন কি সেই গৎবাঁধা?
“আমি যখন ছিলুম ছোট্ট তখন অমুক ঘটনা ঘটে। তক্ষুনি সিদ্ধান্ত নেই বড় হয়ে অমুক হব”।
“আমি অত সালে তমুক করি, তার পরে সমুক করি, আমি আমি” (সিভিতে যা ছিলো পুরাটা গদ্যাকারে ডাম্প করা।
এই রকমের স্টেটমেন্ট কি দিচ্ছেন? কী লাভ? এগুলো ভর্তি কমিটির লোকজন শয়ে শয়ে পড়ে বিরক্ত হয়ে গেছে। তাই গৎবাধা লেখা না লিখে সময় নিয়ে লিখুন। আর রেকোমেন্ডেশন লেটার এমন কারো কাছ থেকেই নিবেন যিনি আপনার সম্পর্কে কিছু কথা পার্সোনাল টাচ দিয়ে লিখতে পারবেন।
৪) প্রিডেটরি জার্নাল/কনফারেন্স দিয়ে সিভি ভরানো
প্রিডেটরি জার্নাল কনফারেন্স এগুলো কিন্তু ভর্তি কমিটির সবাই মোটামুটি চিনে। সিভিতে “ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ অমুক তমুক” এর একগাদা পেপার ভরে দিয়ে দেশে বাহাদুরি নেয়া চলে কিন্তু ভর্তি কমিটির কাছে আপনার ইমেজটা কেমন দাঁড়াচ্ছে? মনে হবে হয় আপনি নিজেই দুইনম্বরি করার চেষ্টায় আছেন, অথবা আপনি এতোই বোকা যে প্রিডেটরি জার্নালের বাটপারেরা আপনার মাথায় একগাঁদা কাঁঠাল ভেঙেছে অনায়াসে।
৫) সিভি আর বিয়ের বায়োডাটা গুলিয়ে ফেলা
প্রায়ই এমন সিভি পাই যেটাকে দেখে মনে হয় পাখি ভাইয়ের কাছে না পাঠিয়ে সেটা কেউ ভর্তির অ্যাপ্লিকেশনে যোগ করে দিয়েছে। সিভির মধ্যে ছবি, ছবির সাথে জন্মতারিখ, বাপ মায়ের নাম, ভাই বোন চাচা খালার নাম, এসব বিস্তারিত লেখা। আবার আপনার শখ গান গাওয়া, ম্যুভি দেখা, এসবও লেখা।
এসব জিনিষ একাডেমিক সিভিতে দেয়ার কথা না, কাজেই সেগুলো প্রাণ ভরে ঘটকের বায়োডাটার জন্য রাখুন — একাডেমিক সিভিতে একাডেমিক জিনিষপত্রই লিখুন।
আরো কিছু লেখার ছিল, কিন্তু সময়াভাবে আজ এটুকুই লিখলাম। আশা করি অ্যাপ্লিকেশন সিজনে সবাই একটু খেয়াল রাখবেন। আরো কিছু কথা আমার আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা বইটিতে লিখেছি, তার অনেকগুলোই নানা সময়ে পোস্ট করেছি, বাকিগুলোও ধীরে ধীরে পোস্ট করবো।
– রাগিব হাসান